কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চল সহ অন্যান্য এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে কৃষকের হাজার হাজার টাকার স্বপ্নের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অপরদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন। এ অবস্থায় তিস্তা পাড়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
এছাড়া বিভিন্ন খাল, ডোবা ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকের আমন ধান, বীজ বাদাম, মরিচ ও বেগুন সহ বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে হঠাৎ বন্যায় তিস্তার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও থামেনি দুর্ভোগ। তবে তারা দাবি করেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমাদের চরাঞ্চল bবাসীকে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসের তথ্য মতে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছিলো এ পর্যন্ত মোট ফসলি জমি ৫০ হেক্টর, মাসকলাই ১৫ হেক্টর, বীজ বাদাম ৫ হেক্টর ও শাকসবজি ২ হেক্টর।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃষ্টি ও বন্যার পানি নেমে গেলেও রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এতে কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সরেজমিন বুধবার (৭ অক্টোবর) তিস্তা বেষ্টিত থেতরাই, গুনাইগাছ, দলদলিয়া ও বজরা ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ারের চর, জুয়ান সতরার চর, হোকডাঙ্গার চর, আমনিয়াসার চর,কর্পূরের চর, গাবরের চর, অর্জুন চর, চাপরার চর, দামার হাট, টিপমার চর, বজরার চর ও সাতালস্কার সহ বিভিন্ন চর গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার পানিতে হাজার হেক্টর আবাদি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে আমন ধান, বীজ বাদাম, বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ নষ্ট হয়ে হাজার হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এসব এলাকার কৃষকেরা। একদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় খরা স্রোতে তীব্র ভাঙ্গনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের মানুষজন। তারা নিরুপায় হয়ে ফলন বিহীন আমন ধান কেটে নিয়ে আসছেন।
এপর্যন্ত তিস্তার চরাঞ্চলে হাজার হাজার হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি নিয়ে অন্যত্রে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন।
চর গোড়াইপিয়ার এলাকার নুর ইসলাম জানান, এবারে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় দেড় একর জমিতে পেঁয়াজ, আলু, মুলা ও লালশাক চাষাবাদ করেছি। দু'দিনের বন্যার পানি আমাকে সব শেষ করে দিয়েছে। ধার দেনা করে এ চাষাবাদ করেছি কিভাবে ধার দেনার টাকা পরিশোধ করব। তিনি আরও বলেন, তিস্তার তীব্র ভাঙ্গনে এক একর ত্রিশ শতক আমন ধানের ক্ষেত সহ জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলো। আমার মরন ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে জানান তিনি।
দক্ষিন দলদলিয়া লাল মসজিদ এলাকার আব্দুল করিম জানান, অর্জুনের চরে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ১একর জমিতে বীজ বাদাম এবং ৪০ শতক জমিতে আমনের চাষ করেছেন। সোমবার সকালে এসে দেখি তালের উপর পানি উঠেছে। আমার স্বপ্ন বন্যার পানি খেয়ে নিলো। আমি কিভাবে অভাবি সংসার চালাবো চিন্তা করে পাচ্ছিনা।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, বন্যার ফলে চরাঞ্চলের অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এছাড়া জমিতে পলি পড়া চাষাবাদের জন্য ভালো। তবে যে সকল জমিতে পলি পড়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে সে সকল ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা আসলে তাদের আগে দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।